Blog Post

Science Tea > News > Science > প্রক্সিমা সেন্টরাই এর যত কথা

প্রক্সিমা সেন্টরাই এর যত কথা

প্রক্সিমা সেন্টরাই সি হল একটি প্রার্থী সুপার-আর্থ বা যা প্রায় ৭টি পৃথিবীর সমান গ্যাস বামন । এর ভর প্রায় ১.৫ জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিট যা প্রতি ১,৯০০ দিনে (৫.২ বছর) ২২০,০০০,০০০ কিমি প্রদক্ষিণ করে। যদি প্রক্সিমা সেন্টরাই বি নক্ষত্রটি পৃথিবী হত তবে প্রক্সিমা সেন্টোরি সি নেপচুনের সমতুল্য হবে।

সুবিশাল মহাকাশে রাতের বেলা তাকালে খালি চোখে আমরা অসংখ্য উজ্জ্বল সাদা ছোট ছোট আলো জ্বলতে দেখতে পাই। এগুলো দেখা যায় সূর্যের আলোর অনুপস্থিতির কারণে। দিনের বেলা তাই এই আলো গুলো খালি চোখে দেখতে পাওয়া যায় না। এরকম অসংখ্য নক্ষত্রের অস্তিত্ব আমরা মহাকাশে খুঁজে পাই। এদের একেকটি আমাদের অবস্থানের থেকে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। সূর্যের থেকে সবচেয়ে কাছের নক্ষত্রটি হচ্ছে প্রক্সিমা সেঞ্চুরি (Proxima Centauri)। এটি একটি লাল বামন নক্ষত্র যা ষাট টি কাছের নক্ষত্রের মধ্যে পঞ্চাশতম। ১৯১৫ সালে রবার্ট ইনেস নামক মহাকাশ বিজ্ঞানী সূর্যের এই অতি নিকট নক্ষত্রটি খুঁজে পান মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে।পৃথিবী থেকে খালি চোখে এটি দেখা খুবই কঠিন কারণ এর চৌম্বকত্ব ১১.১৩। সূর্যের কাছে অবস্থিত এই লাল বামন নক্ষত্রটির অবস্থান, বৈশিষ্ট্য, উপাদান, উৎপত্তি এসব নানান তথ্য জানার চেষ্টা করব আমরা এই আলোচনায়।

উৎপত্তি,অবস্থান,উপাদান, বৈশিষ্ট্য

প্রক্সিমা সেঞ্চুরি নামক এই লাল বর্ণের বামন নক্ষত্রটি আকারে ক্ষুদ্র। এটি ভর পরিমাণে তুলনামূলক কম হওয়ায় এর আকৃতিও ছোট। এটি সূর্য থেকে ৪.২৪৬৫ আলোক বর্ষ দূরে অবস্থিত এবং এটির অবস্থান দক্ষিণের নক্ষত্রপুঞ্জ সেঞ্চুরাসের মধ্যে যা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে অবস্থিত। ল্যাটিন ভাষায় এর নামের অর্থ “সেঞ্চুরাসের নিকটবর্তী”। দক্ষিণের আকাশে সেঞ্চুরাস অতি উজ্জ্বল নক্ষত্রপুঞ্জ।দ্বিতীয় শতাব্দীতে টলেমি ৪৮ টি পর্যন্ত নক্ষত্রের অস্তিত্ব পান যার বর্তমান সংখ্যা ৮৮টি।সেঞ্চুরাসের নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যে আলফা সেঞ্চুরি নিকটবর্তী আমাদের সৌরমন্ডলের এবং এর পাশেই অবস্থিত বেটা সেঞ্চুরি এবং এইচ আর ৫১৭১ এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া বড় আকৃতির নক্ষত্রগুলোর মধ্যে পড়ে। এর মধ্যে ওমেগা সেঞ্চুরি এবং কিছু উজ্জ্বল তারার দেখাও পাওয়া যায় এখানে। প্রক্সিমা সেঞ্চুরি আলফা সেঞ্চুরির এটি বামন নক্ষত্র। এটি আলফা সেঞ্চুরি সি এর একটি সদস্য যা আলফা সেঞ্চুরি এবি জোড়ার সাথে ২.১৪ ডিগ্রিতে দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত।এটি এবি থেকে ১২৯৫০ এইউ (০.২ আলোকবর্ষ) দূরে অবস্থিত যা প্রতিবারে একবার ঘূর্ণন সম্পন্ন করতে ৫৫০,০০০ বছর পর্যন্ত সময়ের প্রয়োজন হয়।

প্রক্সিমা সেঞ্চুরি একটি লাল বামন নক্ষত্র যার ভর সূর্যের ভরের ১২.৫% এবং গড় ঘনত্ব হচ্ছে সূর্যের ৩৩ ভাগ বেশি।এটি পৃথিবী থেকে তুলনামূলক কাছে তাই এর কৌণিক সরণ সরাসরি মাপা যায়। এর কৌণিক সরণ সূর্যের ১৪% বা সাত ভাগের এক ভাগ।যদিও এর উজ্জ্বলতা গড়ে তুলনামূলক কম।সূর্যের কাছাকাছি এই নক্ষত্রটির তলের তাপমাত্রা ৩০০০ কেলভিন পর্যন্ত। রশ্নি বিকিরণের ক্ষমতাও সূর্যের ৯%।এর আলোর বর্ণ লাল হলুদ রঙের। এর উজ্জ্বলতার সর্বসাকুল্যে তরংগ দৈর্ঘ্যের পরিমাপ সূর্যের থেকে ০.১৬%।যদিও এর দৃশ্যমান আলো খুবই সংবেদনশীল এবং এটি সূর্যের দৃশ্যমান আলোর তুলনায় ০.০০৫৬%।এর ৮৫% ভাগ তরং দৈর্ঘ্য ই ইনফ্রারেড তরংগ দৈর্ঘ্যের।

কম ভরের প্রধান ক্রমের নক্ষত্র গুলোর ঘনত্ব অনেক বেশি হয়ে থাকে বেশি ভরের নক্ষত্র গুলোর থেকে।প্রক্সিমা সেঞ্চুরির ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই রকম। এর গড় ঘনত্ব ৪৭.১*১০^৩ কেজি/মিটার^৩ অর্থাৎ এটি প্রতি ঘনফলে ১ মিটার এটি ৪৭.১*১০^৩ কেজি বিদ্যমান। যেখানে সূর্যের ঘনত্ব প্রতি মিটার ঘনফলে ১.৪১১ * ১০^৩ কেজি। এর তলের মহাকর্ষীয় বল লগারিদম বেস – ১০ এ সিজিএস পদ্ধতিতে ত্বরণের এককের মান ৫.২০।যা পৃথিবীর তলের মহাকর্ষীয় বলের তুলনায় ১৬২ গুণ। ১৯৯৮ সালে প্রক্সিমা সেঞ্চুরির আলোক রশ্নির তীব্রতা ফটোমিটার যন্ত্র দ্বারা মাপা হয় এবং এর তারতম্য থেকে দেখা যায় এটি নিজ কক্ষপথে পূর্ণ একটি ঘূর্ণন সম্পন্ন করতে ৮৩.৫ দিন সময়ের প্রয়োজন হয়।পরবর্তীতে একটি সময়ের ধারার গবেষণা থেকে এর ক্রমোস্ফেরিক অর্থাৎ নক্ষত্রের আবহাওয়ামন্ডলের রঙ যা দ্বিতীয় স্তরে বিদ্যমান যা ফটোস্ফেয়ার বা নক্ষত্রের বাইরের আবরণ যেখানে আলো বিকিরণ হয় তার উপরে অবস্থিত। এই গবেষণা থেকে জানা যায় যে নিজ কক্ষপথে একটি পূর্ণ ঘূর্ণন সম্পন্ন করতে ১১৬.৬+-০.৭ দিন পর্যন্ত সময়ের প্রয়োজন পড়ে। তবে পরবর্তীতে এর চৌম্বকীয় ক্ষেত্র অনুযায়ী দেখা যায় এই পূর্ণ ঘূর্ণনের সময় ৮৯.৮ +- ৪ দিন অর্থাৎ ৮৯.৮ দিন থেকে ৪ দিন কম বেশি হতে পারে। আবার আলোক রশ্নি নির্গমন হিসাবে এটি ৯২.১ দিন যা ৪.২ দিন বাড়তে বা ৩.৫ দিন কমতে পারে।

গঠন এবং শক্তি চলাচলের ধরন

তুলনামূলক কম ভরের জন্য প্রক্সিমা সেঞ্চুরির ভেতরের গঠন পরিবাহী ধরনের। আমরা জানি শক্তি তিন রূপে চলাচল করে। সেগুলো হচ্ছে পরিবহন, পরিচলন ও বিকিরণ। কঠিন পদার্থে শক্তি একটি পরমাণু থেকে আরেকটিতে পরিবাহিত হয়। তরল পদার্থে পরিচালিত হয় এবং বায়বীয় মাধ্যমে বিকিরণের মাধ্যমে চলাচল করে। এক্ষেত্রে এই শক্তি পরিচালিত হয়। মূলত কম ভর এবং বেশি ঘনত্বের কারনে এখানে শক্তির পরিবহন হয়।শক্তি ভেতরের গঠন থেকে পরিবাহিত হয়ে বাইরের প্লাজমাতে স্থানান্তর হয়। সূর্যের ক্ষেত্রে শক্তির বিকিরণ ঘটে। এখানে গঠনের মূল ক্ষেত্রে হাইড্রোজেনের তাপীয় নিউক্লিয়ার ফিউশন হয় যা অবশিষ্ট হিলিয়ামের ছাই তৈরি করার মাধ্যমে শক্তির পরিবহন ঘটায় এবং সম্পূর্ণ নক্ষত্রে এটি ছড়িয়ে পড়ে। এর ভেতরের গঠনে হিলিয়াম এবং বাইরের গঠনে হাইড্রোজেনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।এক্ষেত্রে সূর্য এতে উপস্থিত হাইড্রোজেনের ১০% ব্যবহার করে থাকে এর শক্তির উৎপাদনের জন্য যেখানে প্রক্সিমা সেঞ্চুরি বিদ্যমান পুরো হাইড্রোজেনের ব্যবহার করে থাকে।হাইড্রোজেনের এই নিউক্লিয়ার ফিউশন হয়ে হিলিয়াম তৈরি এবং তার ছাই এর সাথে উৎপন্ন তীব্র তাপীয় প্রভাব কে বলা হয় প্রোটন প্রোটন চেইন বিক্রিয়া। প্রোটন বা রুপান্তরিত প্লাজমা গুলোর মধ্যে স্থির তড়িৎ এর উচ্চ গতিশক্তি অর্জন করার জন্য উচ্চ তাপমাত্রা উৎপাদিত হয়। যা সূর্যের ক্ষেত্রে ভিন্ন।সূর্যের ক্ষেত্রে এটি হাইড্রোজেন নিউক্লিয়ার ফিউশন ঘটায় এবং হিলিয়ামে রুপান্তরিত হয় কিন্তু হিলিয়াম পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যায় না এটি নক্ষত্রের মূল ক্ষেত্রে জমাট বেঁধে থাকে। বিক্রিয়ার গতির এই তারতম্যে আলোক রশ্নি নির্গমনেরও তারতম্য দেখা যায়।

এই পরিবাহীতায় একটি চৌম্বকীয় ক্ষেত্র সার্বিক ভাবে ক্রিয়াশীল থাকে। এই চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তার তলে স্টেলার বিচ্ছুরণের মাধ্যমে প্রতি দশ সেকেন্ডে প্রকাশ পায় এবং এর সাথে আলোক রশ্নির তীব্রতা বাড়ে।এই আলোক তীব্রতা বাড়া কমার পেছনে উৎপাদিত তাপমাত্রার কম বেশি দায়ি। তাপের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেলে সেটি বিকিরিত পর্যায়ে চলে যায় যা এক্স রে ধরনের রশ্নি নির্গমন করে। প্রক্সিমা সেঞ্চুরির এক্স রে ধরনের রশ্নির তীব্রতা সূর্যের এক্স রে নির্গমনের কাছাকাছি। এর ক্রমোস্ফেয়ার সক্রিয় এবং এর আলোর বিচ্ছুরণ থেকে আয়নিত ম্যাগনেসিয়ামের নির্গমন রেখা দেখা যায় যার তরংগ দৈর্ঘ্য ২৮০ ন্যানোমিটার। প্রক্সিমা সেঞ্চুরির ৮৮% তল ই সক্রিয় যা সূর্য থেকে অনেক বেশি।তবে অন্যান্য লাল বামন নক্ষত্র থেকে এটি অনেক কম সক্রিয় তাই এর বয়স ধরা হয়ে থাকে ৪.৮৫*১০^৯ বছর। যা স্টেলার ঘূর্ণনের সাথে আয়তনে কমতে থাকে এবং সর্বশেষে সাদা বামন নক্ষত্রে পরিণত হয় জ্বালানি উৎপাদন শেষ হয়ে যাওয়ার জন্য।এর সৌর বায়ু খুবই দুর্বল প্রকৃতির।যা ২০% এর বেশি হয় না। এর কারণও কম আয়তন।

জীবনের ভাগ

প্রক্সিমা সেঞ্চুরির ভরের লাল বামন নক্ষত্র প্রধান ক্রমে থাকবে কমপক্ষে চার ট্রিলিয়ন বছর সময় পর্যন্ত। যত হাইড্রোজেন নিউক্লিয়ার ফিউশন হয়ে হিলিয়াম বাড়তে থাকবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে এর আয়তন কমতে থাকবে এবং তা আস্তে আস্তে নীল বামন নক্ষত্রে পরিণত হবে।শেষের দিকে এটি আরো উজ্জ্বল হয়ে সূর্যের ২.৫% উজ্জ্বলতা প্রাপ্ত হবে। যখন হাইড্রোজেন জ্বালানি শেষ হয়ে যাবে তখন এটি হিলিয়ামে রুপান্তরিত হয়ে যাবে এবং সাদা বামন নক্ষত্রে পরিণত হবে সেই সাথে অবশিষ্ট তাপীয় শক্তি হারাবে।

আলফা সেঞ্চুরির তারা গুলো গতিশীল ভাবে থাকে এবং তা দুইটি নক্ষত্র হিসাবে আবদ্ধ থাকে এই গুচ্ছ ভাংগার আগে। যার মহাকর্ষীয় ভর ১.৫-২ এর মধ্যে বিদ্যমান। যদিও এর সত্যতা জানতে এর বেগের আপেক্ষিকতা আরো ভালো ভাবে যাচাই করতে হবে। প্রক্সিমা সেঞ্চুরি যদি আলফা সেঞ্চুরির সাথে বিবর্তিত হতো তাহলে এর অন্তর্ভুক্ত উপাদান একই রকম হতো। কিন্তু প্রক্সিমা সেঞ্চুরির ম্যাধ্যাকর্ষন বলের কারণে এটি আলফা সেঞ্চুরির প্রধান তল থেকে বিচ্যুত হয়।যে কারনে এতে পানি এবং পাথুরে মাটির অস্তিত্ব সম্পন্ন গ্রহের অস্তিত্বও দেখা যেতে পারে।

গ্রহপুঞ্জের অস্তিত্ব গঠন

প্রক্সিমা সেঞ্চুরি নক্ষত্রটির এখন পর্যন্ত তিনটি গ্রহ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে এর আপেক্ষিক বেগ হিসাব করে যার মধ্যে দুইটি নিশ্চিত এবং একটি প্রস্তাবিত গ্রহ।এর মধ্যে একটি  গ্রহ হচ্ছে “বি” যা পৃথিবীর ভরের সমান অনেকটা এবং কিছুটা বসবাস যোগ্য, “ডি” সবচেয়ে কাছের এবং ভরে হালকা। সর্বশেষটি হচ্ছে “সি” যা বায়বীয় ধরনের এবং বামন গ্রহ তাই এটি এখনো প্রস্তাবিত। ২০২২ সালের এক গবেষণা থেকে এই তথ্য গুলো পাওয়া যায়।

প্ল্যানেট বি

২০১৩ সালে সর্বপ্রথম ইউনিভার্সিটি অফ হার্টফোর্টসায়ারের বিজ্ঞানি মিকো তুওমি প্রক্সিমা সেঞ্চুরির অস্তিত্ব খুঁজে পায়। এটি ভালভাবে অনুসন্ধানের জন্য তারা পেল রেড ডট নামে একটি প্রজেক্ট শুরু করে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের ৩১ জন বিজ্ঞানীদের নিয়ে এবং প্রক্সিমা সেঞ্চুরি বি এর অস্তিত্ব নিশ্চিত করে।এতে ব্যবহার করা হয় অত্যাধুনিক তরংগদৈর্ঘ্য মাপার স্প্রেক্ট্রোগ্রাফ হারপ্স (HARPS)   ESO ৩.৬মিটার টেলিস্কোপ  এবং  UVES ৮মিটার অত্যন্ত বড় টেলিস্কোপের সাহায্যে।প্রক্সিমা সেঞ্চুরির আপেক্ষিক গতির মধ্যে ভারসাম্যের তারতম্য অনুযায়ী এর অস্তিত্ব রয়েছে প্রকাশ পায়। এর অক্ষীয় ঘূর্ণনের সময়কাল পৃথিবীর দিনের ১১.২ দিনের সমান,ভর পৃথিবীর ১.১৭ গুণ এবং তাপমাত্রা তুলনামূলক এরকম যে সেখানে পানির অস্তিত্ব পাওয়া সম্ভব যে কারনে সেখানে জীবনের অস্তিত্ব উপযোগী পরিবেশ রয়েছে।

প্ল্যানেট সি

প্ল্যানেট সি একটি বায়বীয় পদার্থ পরিপূর্ণ গোলক যার ভর পৃথিবীর ভরের ৭ গুণ। এটি একবার কক্ষপথে ঘূর্ণনের জন্য ১৯০০ দিন সময় লাগে যা পৃথিবীর ৫.২ বছরের সমান।  এটি আমাদের সৌর মন্ডলের নেপচুনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি প্রক্সিমা সেঞ্চুরি নক্ষত্র থেকে দূরে তাই এর তাপমাত্রা কম যা ৩৯ কেলভিন পর্যন্ত হবে। ২০১৯ সালের এপ্রিলে ইতালিয়ান মহাকাশ পদার্থবিদ মারিও দামাসো এবং তার সহকর্মী রা খুঁজে পান।২০২০ এ এসো হারপস থেকে পাওয়া তথ্য থেকে ১৯৯৫ সালের হাবল টেলিস্কোপের তথ্য প্রমাণিত হয় এবং এর অস্তিত্ব নিশ্চিত হয়।

প্ল্যানেট ডি

২০১৯ সালে মহাকাশ বিজ্ঞানী রা  ESPRESSO এর তথ্য পুনরায় যাচাই করে দেখতে পান প্রক্সিমা সেঞ্চুরির ভর অনুযায়ী এর আপেক্ষিক গতিবেগ ৫.১৫ দিনে বিচ্যুত হয়।তাই ধারণা করা হয় আরো গ্রহের অস্তিত্ব। যার ভর ধারণা করা হয় পৃথিবীর ভরের  ০.২৯ গুণ। আরো নানা ধরনের সিগনাল থেকে অস্তিত্বের প্রমান পাওয়ার পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এর অস্তিত্বর ঘোষণা দেয়া হয়।

গ্রহে বসবাস যোগ্যতা

প্রক্সিমা সেঞ্চুরির সাথে এর গ্রহ গুলোর ঘূর্ণনের কক্ষপথ যদি স্থির ম্যাধ্যাকর্ষন বলে ঘুরতে থাকে তাহলে এই গ্রহ গুলো তে আবহাওয়া মন্ডল থাকার সম্ভাবনা আছে। এই নক্ষত্রের কোন গ্রহের ক্ষেত্রে এরকম হলে তার অক্ষীয় ঘূর্ণনের সময়কাল হবে ৩.৬ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত। এই গ্রহের অক্ষীয় বক্রতা কম হবে এবং নক্ষত্রের ঘূর্ণন এর আকাশে খুব অল্প হওয়ায় এটির ভূতল সবসময় দিন বা রাত ই থাকবে।এই গ্রহে যদি আবহাওয়া মন্ডল বিদ্যমান ও থাকে তাহলে এই আবহাওয়া মন্ডল সূর্য থেকে পাওয়া শক্তি সম্পূর্ণ ভূপৃষ্ঠে ছড়িয়ে দিতে পারবে। প্রক্সিমা সেঞ্চুরির আলোক রশ্নি নির্গমনের ভিন্নতার জন্য এর গ্রহে অবস্থিত আবহাওয়া মন্ডল ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। যদি এনিয়ে তৈরি একটি টিভি ডকুমেন্টরি “এলিয়েন ওয়ার্ল্ড” এই সমস্যা অগ্রাহ্য করা সম্ভব বলে দাবি করেন। অপর দিকে ইউনিভার্সিটি অফ বার্কলির প্রফেসর গিবর বাসলি বলেন সত্যিই এই গ্রহে জীবনের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব বা জীবন যাপন করা সম্ভব এই সম্পর্কে কোন শক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ভবিষ্যত অভিযান

পৃথিবীর মত কিছুটা মিল থাকার জন্যে প্রক্সিমা সেঞ্চুরি কে দুইটি তারার মধ্যবর্তী মহাকাশ যাত্রার জন্য লক্ষ্য হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। যদি সাধারণ ইঞ্জিন চালিত রুকেট দিয়ে যাত্রা শুরু করা হয় তাহলে এখানে পৌছাতে সময় লাগবে হাজার বছরের মত।উদাহরণ স্বরুপ ভয়েজার ১ প্রতিসেকেন্ডে ১৭ কিমি গতিতে প্রক্সিমা সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যা পৌছাতে সময় লাগবে ৭৩,৭৭৫ বছর। নিউক্লিয়ার প্রপালশন ইঞ্জিন দ্বারা এর অভিমুখে যাত্রা করলেও ১০০ বছরের মত সময় প্রয়োজন হবে।এ ক্ষেত্রে প্রজেক্ট ওরিয়ন, প্রজেক্ট ডেডালাস, প্রজেক্ট লংশট উল্লেখ্য। প্রজেক্ট ব্রেকথ্রু স্টার শট একবিংশ শতাব্দীর মধ্যে সেখানে পৌছানোর লক্ষ্য নিয়েছে। যেখানে একটি মাইক্রো প্রব সূর্যের আলোর ২০% এ চলবে পৃথিবীর লেজারের দ্বারা যার মান ১০০ গিগা ওয়াট।

           মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির মধ্যে এরকম অসংখ্য লাল বামন নক্ষত্রের দেখা পাওয়া যার গঠন ব্যবহার প্রক্সিমা সেঞ্চুরির মতই। মহাকাশ জুড়েই এরকম নানা চমকপ্রদ অজানা জানা নক্ষত্র এবং বস্তুর অবস্থান যা আমাদের জ্ঞানের পরিসীমা কে আরো বিস্তৃত করে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *