Blog Post

Science Tea > News > Space > যে জীবন মঙ্গলের
Life in Mars

যে জীবন মঙ্গলের

আমরা জেনে এসেছি যে পৃথিবী নামক একটি গ্রহে আমাদের বসবাস। পৃথিবী নামক এই গ্রহটি ঘুরছে সূর্য নামক একটি জ্বলন্ত নক্ষত্রের চারপাশে। এই পুরো ঘটনাটি ঘটছে ছায়াপথ নামক জায়গায় যা মহাকাশেরই বিস্তৃত রূপ।

রূপ।মহাকাশে এই সূর্য নামক নক্ষত্রটি কে ঘিরে শুধু পৃথিবী নয় ঘুরছে আরো সাতটি গ্রহ। সৌর মন্ডলের এই গ্রহ গুলো থেকে সবচেয়ে কাছের গ্রহটি হচ্ছে বুধ এরপর ক্রমান্বয়ে শুক্র,পৃথিবী,মংগল,বৃহস্পতি,শনি,ইউরেনাস এবং নেপচুন। আরও পাঁচটি বামন অর্থাৎ ছোট গ্রহ বিদ্যমান। আমাদের আজকের মূল বিষয়টি হচ্ছে সৌরমন্ডলের চার নাম্বার গ্রহ এবং পৃথিবীর কক্ষপথের সবচেয়ে কাছের গ্রহ মংগলে জীবনের বসবাস সম্ভব কিনা সেই সম্পর্কে।আমরা জানব মংগলের সময়, ঘূর্ণন বেগের কারণে জলবায়ু ও আবহাওয়াগত পরিস্থিতি, মাটি ও বাতাসে থাকা উপাদানের পরিমাণ, খাবারের উৎপত্তি সম্ভব কিনা বা সাধারণ বাতাসে থাকা সম্ভব কিনা এসব সম্পর্কে। মূলত স্বাভাবিক জীবনের জন্য মংগলের পরিবেশ কতটা অনুকূল সেটি জানার চেষ্টা করব।

সময়,কক্ষপথ,আবহাওয়া ও মাটি
মংগল সৌরজগতের চতুর্থ গ্রহ এবং পৃথিবীর আকাশে উজ্জ্বলতম পৃথিবী থেকে এর দূরত্বের কারনে। মংগল গ্রহকে যদি স্বচ্ছ টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা হয় এটি দেখতে লাল বর্নের, এর কারন হচ্ছে মংগলের ভূমি বা মাটিতে ফেরিক অক্সাইড এর আধিক্য যা লোহার এবং অক্সিজেনের পরমাণু মিশ্রিত। এর বায়ুমন্ডলে রয়েছে ৯৬% কার্বন ডাই অক্সাইড, ১.৯৮% আর্গন, ১.৮৯% নাইট্রোজেন, ০.১৪৬% অক্সিজেন, ০.০৫৫৭% কার্বন মনো অক্সাইড, ০.০২১০% বাস্প বিদ্যমান। যা স্বাভাবিক জীবনের জন্যে অনুকূল নয়।যেহেতু পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ৭৮.০৮ % নাইট্রোজেন, ২০.৯৫% অক্সিজেন, ১% এর সমান বা বেশি বাস্প,০.৯৩৪% আর্গন গ্যাস তাই পৃথিবী বসবাস যোগ্য।মংগলের মাটি এখনো ভূমিকম্প ও অগ্নুৎপাত প্রবন।তবে মংগলের পুরো একটি দিন বা সূর্যের চারপাশের পরিভ্রমণের পুরো সময় ২৪ ঘন্টা ৩৯ মিনিট যা পৃথিবীর আহ্নিক গতি থেকে ৩৯ মিনিট বেশি। এ জন্যে সেখানে সৌর বর্ষ ১.৮৮ বছর বা ৬৮৭ দিন। যা পৃথিবীর দুই বছর থেকে ৪৩ দিন কম। যা তুলনামূলক অন্যান্য নিকটবর্তী গ্রহের তুলনায় পৃথিবীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।  মূলত মাটির অস্তিত্বের প্রমান পৃথিবী সহ মংগল, বুধ এবং শুক্রে বিদ্যমান। কিন্তু বুধ এবং শুক্র সূর্যের  নিটকবর্তী হওয়ায় এদের তাপমাত্রা মাত্রাতিরিক্ত। মংগলের তাপমাত্রা তুলনামূলক পৃথিবীর কাছাকাছি কিন্তু কম। মংগলের ভূমির তাপমাত্রা -১১০°সেলসিয়াস থেকে ৩৫°সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠানামা করে স্থান এবং ঋতু ভেদে।মংগলের ঋতু পৃথিবীর ঋতুর সময়ের দ্বিগুন হয়ে থাকে।এর কারন সূর্যের থেকে এর দূরত্ব এবং সূর্যের রশ্নির প্রতিফলনের হার। এর আবহাওয়া মন্ডল পাতলা তাই এটি সূর্যের তাপ সংরক্ষণ করতে পারে না। যেকারণে এই গ্রহের তাপমাত্রা তুলনামূলক কম হয়। আবহাওয়ার চাপ খুবই কম যা পৃথিবীর তুলনায় ১% এবং মংগলের মাটির তাপমাত্রার পরিবাহিতা বেশি যার কারন ফেরিক অক্সাইড এর আধিক্য। ফেরাস সাধারণত তাপ পরিবাহি তাই যলদি ই তাপ বিকিরণ করতে সক্ষম। পৃথিবীর ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হচ্ছে -৮৮°সেলসিয়াসের আশেপাশে এবং সর্বোচ্চ ৫৬° সেলসিয়াসের আশেপাশে। তাপমাত্রার পার্থক্য তুলনামূলক কাছাকাছি তাই সামঞ্জস্য রয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়।

এখন বলা যেতেই পারে এত কাছাকাছি মিল থাকলে কি সত্যিই মংগলে জীবনের বাস সম্ভব? মূলত মংগলের কক্ষপথের ঘূর্ণন গতিবেগ কম, এর সূর্যের সাথে বিদ্যমান কৌনিক অবস্থানের কারনে। এটি চতুর্থ গ্রহ তাই পূর্ববর্তী তিনটি গ্রহ থেকে এর দূরত্ব অনুযায়ী ঘূর্ণনবেগ তুলনামূলক কম আবার পরবর্তী গ্রহ গুলো তুলনায় বেশি। একারনে এর আহ্নিক গতি ৩৯ মিনিট ৩৫.২৪ সেকেন্ড বেশি এবং একবছর এর পরিমাণ ও পৃথিবীর তুলনায় ৩২২ দিন বেশি অর্থাৎ সূর্যের চারপাশে এটি পূর্ন ঘুর্নন সম্পন্ন করতে ৩২২ দিনের অধিক প্রয়োজন হয়। এতে এই দূরত্বের কারনে সূর্যের তাপও পূর্বের তিনটি গ্রহ থেকে কম আপতিত হয়।মংগলের কক্ষপথের বক্রতা তুলনামূলক অন্যান্য গ্রহ থেকেও অধিক। যাকে ইংরেজিতে বলে অরবিট এসেন্সিটি (Orbit Essencity) যার মংগল গ্রহের মান ০.০৯৩৪ আর পৃথিবীর ক্ষেত্রে তা ০.০১৬৭। এর কারণ ও সূর্যের থেকে মংগলের দূরত্ব, সূর্যকে একবার পূর্ণ পরিভ্রমণ করার জন্যে এটি সুনির্দিষ্ট কক্ষপথ। যা এর সময়কে সম্প্রসারিত করে পৃথিবীর সময়ের তুলনায়।যে কারনে মংগলের একদিন ৩৯ মিনিট এবং এক বছর ৩২২ দিনে সম্প্রসারিত হয়, এবং এটিই ঋতু পরিবর্তনে দ্বিগুণ সময় লাগার কারন।কক্ষপথের এই অধিক বক্রতা সময়কে সম্প্রসারিত করে তোলে। তবে এ ছাড়াও মংগলে বাস সম্ভব কারন তাপমাত্রা এবং কক্ষপথের ঘূর্ণন স্বাভাবিক জীবনের উপযোগী।  মংগলের অক্ষিয় বক্রতা বা অক্ষ কোণ অর্থাৎ মহাকাশের লম্ব তল থেকে গ্রহটি যত ডিগ্রি তে বাঁকানো আছে তার মান হচ্ছে ২৫.১৯° আর পৃথিবীর ক্ষেত্রে এটি ২৩.৪৪° এবং এর কারণও সূর্য থেকে দূরত্ব। বুধের এই লম্ব তল থেকে কৌণিক সরণের মান ০.০৩৪° এবং শুক্রের ২.৬৪°। সূর্যের কাছাকাছি হওয়ার এদের মান খুবই কম। এদের কক্ষপথের ঘূর্ণন গতিও অনেক বেশি তুলনামূলক পৃথিবী এবং মংগলের থেকে। তাই এদের আবহাওয়া ও মাটির অবস্থা সাধারণ জীবনের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। পৃথিবীর কক্ষীয় গতিপথে ঘুর্ণনের মান ২৯.৭২ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ডে আর মংগলের সেটি ২৪.০৭ কিলোমিটারমিটার প্রতি সেকেন্ডে। কাছাকাছি হলেও জলবায়ু এবং মাটির মধ্যকার যে পার্থক্য সেটির কারন সূর্য থেকে দূরত্ব এবং ঘূর্ণনের পার্থক্য। আমরা আগেই জেনেছি মংগল কে দেখতে আবছা লাল কমলার রঙ এর সংমিশ্রণ মনে হয় এর মাটিতে বর্তমান ফেরিক অক্সাইডের আধিক্যের কারণে। এছাড়াও এর মাটি থোলেইটিক ম্যাগমা সিরিজের (Tholeitic Magma Series) যা পাথুরে এবং বালির মত, এতে এলুমিনিয়াম, সিলিকন, অক্সিজেন, অল্প পটাসিয়াম ও বিদ্যমান। যা পৃথিবীর মাটি এবং সামুদ্রিক মাটিতেও বিদ্যমান। এই শক্ত পাথুরে মাটি পার্শ্বীয় এলকালাইন জাতীয় মিনারেল এবং ক্যালক এলকালাইন দ্বারা গঠিত।থোলেইটিক মাটির মধ্যে আয়রন বা ফেরাস এবং এলুমিনিয়াম বেশি থাকে ক্যালক এলকালাইন জাতীয় মাটির থেকে। সময়ের সাথে মাটির রাসায়নিক গঠনের পরিবর্তনে দেখা যায় কিভাবে এটি দিনে দিনে সিলিকা সমৃদ্ধ হয়।এই সিলিকা সমৃদ্ধ মাটি পৃথিবীর এন্ডেস্টিক পাথরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি শক্ত কালো পাথুরে মাটি যা পৃথিবীতে সাধারণত আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত থেকে এসে তাপ বিকিরণ করে শক্ত কালো পাথরে পরিণত হয়। স্লোভাকিয়ার পাথুরে পাহাড়, পেরুর সাচসাহুয়ামান সিটাডেল,ইন্দোনেশিয়ার জাভাতে বরবুদুর নামক স্থানে এধরণের মাটি রয়েছে। স্লোভাকিয়ার পাহাড়ে এ ধরনের মাটিতে মস জাতীয় উদ্ভিদ ও জন্ম নিতে পারে। তবে মংগলের মাটি এলকালাইন সমৃদ্ধ হওয়ার এর পিএইচ (pH) বা হাইড্রোজেন এর মাত্রা বেশি। এতে জন্ম নেয়া উদ্ভিদ ও অধিক পিএইচ সম্পন্ন হবে যা ৭.৭ এর আশেপাশে এবং প্রানির জন্যে ক্ষতিকর। সাধারণত পৃথিবীতে জন্মানো অধিক পিএইচ সম্পন্ন খাদ্যের মধ্যে রয়েছে বাঁধাকপি,গরুর ঘাস যার পিএইচের মান ৬.৬ থেকে ৬.৮ পর্যন্ত হয়। এদেরকে এলকালাইন শস্য বলে।কিন্তু এরা কিছুটা এসিডিক হওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়।তবে মংগলের মাটি এখনো ভূমিকম্প ও অগ্নুৎপাত  প্রবণ।

মহাকর্ষীয় বল,আকার

সূর্যের রশ্নি শোষণের হার মংগল গ্রহের বেশি পৃথিবীর তুলনায়। মংগলের এলবেডো বা সূর্য রশ্নি প্রতিফলনের হার ০.১৭ জ্যামিতিক ভাবে এবং পৃথিবীর জন্য সেটি ০.৩৬৭ অর্থাৎ পৃথিবীতে আপতিত সূর্যরশ্মির মধ্যে ০.৩৬৭ অংশ প্রতিফলিত হয় বাকিটা শোষিত হয়। আর কক্ষপথ এর আকার, সূর্য রশ্নি শোষণের হার এবং আকৃতি হিসাবে মংগলের মহাকর্ষীয় বল ৩.৭২ মিটার পার সেকেন্ডে যা পৃথিবীর ৯.৮১ মিটার পার সেকেন্ড।শনির ক্ষেত্রে সেটি ১০.৪৪ মিটার পার সেকেন্ড। আবার চাঁদের মহাকর্ষীয় বল ১.৬৭ মিটার পার সেকেন্ড যে কারনে মুক্তি কম। পৃথিবীর ক্ষেত্রে মুক্তি বেগ বেশি মংগলের তুলনায়। মুক্তি বেগ হচ্ছে যে বেগে কোন বস্তু ভূতল থেকে সমান বেগে লম্ব বরাবর মহাকাশ দিকে উঠতে থাকবে। এ ক্ষেত্রে কিছু অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করা যায় যদিও যা খুব ই স্বাভাবিক প্রাকৃতিক বিষয়।

মংগলের আকার পৃথিবীর আকারের তুলনামূলক কম। মংগলের আয়তন ১.৪৪৭×১০^৮ কিলোমিটার^২ যা পৃথিবীর তুলনায় মাত্র ০.২৮৪ গুণ। ঘনত্ব ১.৬৩১১৮×১০^১১ কিলোমিটার^৩ যা পৃথিবীর তুলনায় ০১.৫১ গুণ এবং ভর হচ্ছে ৬.৪১৭১×১০^২৩ কেজি যা ০.১০৭ গুণ। আকৃতি তে ছোট হওয়ার জন্যে এর আবহাওয়া ও বায়ুমন্ডল হালকা। এছাড়াও চার হাজায় বিলিয়ন বছর আগে মিটিওর এবং এস্টারয়েড এর আছড়ে পড়ার কারনে এর ম্যাগনেটো বা চৌম্বকীয় বলয় ক্ষতিপ্রাপ্ত হয়।অপরদিকে পৃথিবীর চারপাশে একটি চৌম্বকীয় বলয়ের ক্ষেত্র বিদ্যমান যা ডপ্লার ইফেক্টের মত বিচরণ করে সামনে শক্ত চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করে যা পৃথিবীকে রক্ষা করে সূর্যের তীর্ব ক্ষতিকারক রশ্নি থেকে এবং সেটি বো শক হিসাবে নিচের দিকে চলে যায় । মংগলের বায়ুর চাপ ৩০ প্যাসক্যালের কম যা পৃথিবীর ১% এর সমান। মংগলে কার্বন ডাই অক্সাইড, আর্গন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেনের আধিক্য থাকায় এটি বিষাক্ত জীবনের জন্য এখনো। এখানে কিছুটা পানির অস্তিত্বও পাওয়া যায়।যদিও গ্রহটি ধুলাবালি সমৃদ্ধ। মংগলের বায়ুমন্ডলে মিথেনের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য। সাধারণত উত্তরীয় ঠান্ডায় এর মান থাকে ০.২৪ পিপিবি এবং দক্ষিণের গরমে এর মান ০.৬৫ পিপিবি। এর উপস্থিতির কারন হিসাবে জানা যায় সার্পেন্টাইজেসন নামক একটি নির্জিব প্রক্রিয়া যা পানি, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অলিভিন নামক মাটির মধ্যকার মিনারেল দ্বারা সম্পন্ন হয়।এধরনের মাটি পৃথিবীতে সামুদ্রিক তল যেখানে পিএইচের মান বেশি সেখানে লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া দক্ষিণে নিউ ক্যালেডোনিয়াতে এ ধরনের মাটিতে গাছের প্রাণের নজির রয়েছে যদিও তাতে অতিরিক্ত পিএইচ বিদ্যমান। তবে হতাশাজনক বিষয় হচ্ছে তবুও এটি বিষাক্ত জীবনের জন্যে।

পানির অস্তিত্ব 
মংগলে পানির অস্তিত্ব সেখানকার সাধারণ প্রাকৃতিক অবস্থার কারনে থাকা সম্ভব না। মংগলে বায়ুমন্ডলের চাপ খুব ই কম থাকার কারনে এটি তরল রুপে থাকতে পারে না। মংগলের দক্ষিণে দুইটি পোলার আইস ক্যাপ বা বরফের গোলাকার জমানো স্তুপ রয়েছে যার মূল উপাদান কার্বন ডাই অক্সাইড বা ড্রাই আইস। কার্বন ডাই অক্সাইডের তৈরি এই বরফ যদি গলতে শুরু করে তাহলে মংগলের সম্পূর্ণ তল তলিয়ে যাবে ১১ মিটার গভীরতা বজায় রেখে৷ ধারণা করা হয় মংগলের মাটির নিচের ভাগে ক্রায়োস্ফেয়ারে একটি বড় অংশের ড্রাই আইস বিদ্যমান। মারস এক্সপ্রেস এবং মারস রিকইনসেন্স অরবিটার এর তথ্য থেকে দেখা যায় উভয় মেরুতেই পোলার ক্যাপ বিদ্যমান এবং সেগুলো অক্ষাংশের মধ্য বরাবর অবস্থিত৷ তবে দি ফিনিক্স ল্যান্ডার ২০০৮ সালের ৩১ জুলাই মংগলের মাটিতে পানির অস্তিত্বের প্রমান পায়।মংগলের মাটিতে পানির স্রোতের মত দাগের অস্থিত্বও প্রমান করে যে হয়ত কখনো কম আকারে হলেও পানির ধারা প্রবাহিত হয়েছে।

স্বাভাবিক জীবনের সম্ভাবনা

এখন কি বলা যায় সত্যিই মংগলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব? ১৯ শতকের শেষের দিকে মংগলের বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন ও পানির অস্তিত্ব এর প্রমানের জন্য ধারণা করে নেয়া হয় মংগলে বসবাস সম্ভব। এটি ১৮৯৪ সালে প্রথম লক্ষ্য করে ডব্লিউ ডব্লিউ ক্যাম্পবেল এবং লিক অবসারভেটরি। তখনকার স্ট্রেতোস্কোপের সাহায্যে পানি এবং অক্সিজেনের অস্তিত্বের পরিমাপ করা হয় যা পরিমাণে অল্প ছিল।১৯০৯ সালে আরো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আবার পরীক্ষা করে একই ফলাফল পাওয়া যায়।১৯২৫ এ পৃথিবীর মত আবহাওয়া হওয়ার ভ্রান্ত ধারণা ভেংগে যায় অবশেষে।গ্রহটির সাধারণ প্রাকৃতিক অবস্থার জন্য এটি এখনো সাধারণ জীবনের জন্য প্রস্তুত নয়। এর হালকা আবহাওয়ার জন্য পানির সাধারণ অবস্থায় না থাকা, এর কক্ষপথের ঘূর্ণন যা আবহাওয়ার গঠনের জন্য দায়ী এগুলো সাধারণ কারন। যদিও আগের পানির প্রবাহ প্রমাণ করে এই গ্রহে পানির অস্তিত্বের।এই পাতলা আবহাওয়া গঠনের জন্য ম্যাগ্নেটো ক্ষেত্র যে কারনে বায়ুমন্ডলের চাপ কম তাই এটি কঠিন ড্রাই আইস থেকে সরাসরি বায়ুতে পরিণত হয় সাবলাইম পদ্ধতিতে, শুধু তাই নয় একই কারনে এর আবহাওয়া সূর্যরশ্নির রেডিয়েসন এবং ইউভি রশ্নি থেকেও এর ভূমিতল কে বাঁচতে পারে না।১৯৭০ সালে দি ভাইকিং প্রব এর তথ্য থেকে জানা যায় মংগলের মাটিতে মাইক্রো অর্গানিজম বা ক্ষুদ্র জীবনের অস্তিত্ব।এতে কিছু ক্ষণস্থায়ী কার্বন ডাই অক্সাইড এর উৎপত্তি,পানি এবং পুষ্টি গুন সম্পন্ন মিনারেলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় মাটির নিচের এক ভাগে জীবনের অস্তিত্ব পাওয়া যায় যেখানে ২০১৪ সালে মারসিয়ান মেটেরিওয়েট ইইটিএ৭৯০০১ এর একটি তথ্য থেকে জানা যায় ক্লোরেট, পারক্লোরেট, নাইট্রেট আয়ন উচ্চ ঘনত্বে ছড়িয়ে রয়েছে পুরো মংগলের ভূমি জুড়ে। ইউভি রশ্নি এবং সূর্যের অতি তীব্র রশ্নি এই ক্লোরেট এবং পার ক্লোরেটকে রিএক্টিভ অক্সিক্লোরিন হিসাবে তৈরি করে যা থেকে ধারণা করা যায় নিচে জমে থাকা জৈব অণুর অস্তিত্ব যা টিকে থাকার চেষ্টা করছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
মংগলের বিষয় গত পর্যবেক্ষণের জন্য কিছু ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে। এদের মধ্যে নাসার ২০৩০ এর দিকে মংগল ভ্রমণ, চায়নার ২০৩৩ এ মারস মিশন উল্লেখযোগ্য। এক্ষেত্রে প্রাইভেট কোম্পানি গুলোর মধ্যে স্পেসএক্স (SpaceX) এগিয়ে রয়েছে। আগামী বিশ বছরের মধ্যে মংগলে মানুষের বাস সম্পূর্ণ ভাবে ব্যবস্থা করার ইচ্ছা স্পেএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কএর। এক্ষেত্রে তিনি তৈরি করেছেন স্টারসিপ নামক একটি পরিবাহী রকেট যা সাহায্য করবে তার মংগল গ্রহ কে নিয়ে এই লক্ষ্যের। আশা করা যায় উনি সফল হবেন আর মানব জাতি দুই গ্রহেই স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন ধারণ করতে সক্ষম হবে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *